এইমাত্র পাওয়াঃ আবারও সয়াবিন তেল নিয়ে আসলো বড় দুঃসংবাদ!

এইমাত্র পাওয়াঃ আবারও সয়াবিন তেল নিয়ে আসলো বড় দুঃসংবাদ!

বেশি দাম দিয়েও চাহিদা মতো সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। তেল কিনতে বাজারে গিয়ে অনেকেই ফিরছেন খালি হাতে। কেউ আবার ৫ লিটারের জার কিনতে গিয়ে পাচ্ছেন এক লিটার। দোকানিরা বলছেন, সয়াবিন তেলের পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই।

রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়জনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি দেশে নতুন কিছু নয়। তবে এবারের ভোজ্যতেলের বাজার যেন ছাড়িয়ে গেছে অতীতের সব রেকর্ড। প্রথমে সংকট শুরু হয়েছিল তেলের অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধি দিয়ে। এখন বেশি দামেও পাচ্ছেন না ক্রেতারা। এ যেন বোতলজাত তরল সোনা! হাতে পেলেই ধন্য হচ্ছেন ক্রেতারা।

ফেব্রুয়ারি মাসে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে আট টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তাতে বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম হবে ১৬৮ টাকা। কিন্তু বাজারে ১৭৫ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে বলে ক্রেতাদের অভিযোগ। অনেক ক্ষেত্রে বাড়তি দাম দিয়েও সয়াবিন তেল মিলছে না।

রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার বাসিন্দা তবারক হোসেন সয়াবিন তেল কিনতে বাজারে গিয়ে ফিরে এসছেন খালি হাতে। দোকানিরা বলছেন, স্টক যা ছিল সকালেই শেষ হয়ে গেছে। তাদের কাছে আর তেলের মজুদ নেই।

কাটাবন এলাকার মুদি দোকানি মিলন মিয়ার সাথে কথা বলে জানা যায়, ডিলাররা চাহিদা অনুযায়ী সয়াবিন তেল সরবরাহ করছে না। যা দিচ্ছে তাও বেশি মূল্যে। তাই তাদের পক্ষে খুচরা ক্রেতাদের চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না।

এদিকে সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও নেতা বিভিন্ন সময় অভিযোগ করে আসছেন, বিরোধীদল তাদের মতাদর্শের ব্যবসায়ীদের দিয়ে তেল মজুদ করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে সরকারকে বিপাকে ফেলতে চাইছে। এমন অভিযোগকে সরাসরি নাকচ করে দিয়েছেন বিরধীদলীয় নেতারা।

তবে সয়াবিন তেলের এই সংকটের পেছনে মজুদদারি একটা বড় কারণ বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশ্বে সয়াবিন তেলের তৃতীয় বৃহত্তম আমদানিকারক দেশ বাংলাদেশ। তবে ব্যবহারের দিক থেকে দেশের অবস্থান দশম। আমদানির তথ্য বলছে, বাজারে এখনই সয়াবিন তেলের সংকট হওয়ার কথা নয়।

তারপরও বিশ্ববাজারে দাম বাড়তে থাকায় সয়াবিন কেনায় ক্রেতাদের হুড়োহুড়ি বেড়েছে বাজারে। সেই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছেন বিক্রেতাদের কেউ কেউ। বেশি দাম পেতে মজুত করছেন তারা। আবার সয়াবিন পরিশোধনকারী কোম্পানির পরিবেশকেরাও চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করছে না দোকানে। এতে সয়াবিনের সংকট দেখা দিয়েছে।

দেশে সয়াবিনের চাহিদা মেটানো হয় দুইভাবে—ছয়টি প্রতিষ্ঠান অপরিশোধিত সয়াবিন আমদানি করে পরিশোধনের পর বাজারজাত করে; আর সয়াবীজ আমদানি করে প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সয়াবিন তেল বাজারজাত করে।

এ দুইভাবে দেশের বার্ষিক ১২-১৩ লাখ টন সয়াবিনের চাহিদা পূরণ করা হয়। সেই হিসাবে প্রতি মাসে সয়াবিনের চাহিদা রয়েছে এক লাখ টনের কাছাকাছি। তবে রোজায় এই চাহিদা কিছুটা বেড়ে যায়।

২০২০-২১ অর্থবছরে অপরিশোধিত সয়াবিন তেল আমদানি হয় ৭ লাখ ৮৫ হাজার টন। আর প্রায় ২৪ লাখ টন সয়াবিন বীজ থেকে পাওয়া যায় ৪ লাখ ৩৩ হাজার টন তেল। অপচয় বাদ দিলে কমবেশি ১২ লাখ টন সয়াবিন আমদানি হয়েছে।

আমদানির তথ্যে দেখা যায়, গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি দুই মাসে অপরিশোধিত সয়াবিন তেল আমদানি করা হয় প্রায় ৯৩ হাজার টন। বন্ড সুবিধার আওতায় আমদানির পর ওই তেল রাখা হয় চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় সাতটি ট্যাংক টার্মিনালে। মূল্য সংযোজন কর পরিশোধ করে ট্যাংক থেকে খালাস করে ওই তেল কারখানায় নেওয়া হয়। কারখানায় পরিশোধনের পর বোতলজাত বা খোলা দুইভাবে বিক্রি করে কোম্পানিগুলো।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, গত দুই মাসে অপরিশোধিত সয়াবিন তেল বাজারজাত হয়েছে ১ লাখ ৬৯ হাজার টন। ট্যাংক টার্মিনালে আগের মজুত থাকায় আমদানির চেয়ে বেশি পরিমাণ তেল বাজারজাতের জন্য খালাস করতে পেরেছে কোম্পানিগুলো। সাধারণত ট্যাংক টার্মিনাল থেকে খালাসের পর পরিশোধন করে বাজারজাত করতে এক-দুই সপ্তাহ সময় লাগে। সেই হিসাবে সয়াবিন তেলের একাংশ কোম্পানির কারখানা বা দোকানে বাজারজাতের অপেক্ষায় রয়েছে।

গত বছর রোজার আগে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে বাজারজাত হয়েছিল ১ লাখ ২১ হাজার টন সয়াবিন তেল। এ বছর একই সময়ে গতবারের চেয়ে ৪৮ হাজার টন বেশি তেল আমদানি হয়েছে।

আবার গত বছরের চেয়ে এবার জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে সয়াবিন বীজ আমদানি বেশি হয়েছে ৪০ হাজার টন। তাতে বীজ থেকে সয়াবিন উৎপাদনও আগের তুলনায় বেড়েছে। এ দুটি তথ্য প্রমাণ করে, বাজারে সংকট হওয়ার কথা নয়।

এদিকে সরকার ভোজ্যতেলের দাম সহনীয় করতে সয়াবিনের উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট মানুষেরা বলছেন, সরকার আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট আরও আগে প্রত্যাহার করলে কিছুটা সুফল মিলতো।

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *